সুরা ইখলাস পাঠের বৈশিষ্ট্য সমূহ
আরও পড়ুনঃ সূরা আত-ত্বীন এর ফযিলত
সুরা ইখলাস পবিত্র কোরয়ানুল কারিমের ১১২তম সুরা। এই সুরার আয়াত সংখ্যা ৪ (চার) রুকু সংখ্যা ১ (এক) টি। পবিত্র এই সুরাটি সুরা নাসের পরে হিজরতের আগে মক্কার প্রথম যুুগে অবতীর্ণ হয়। ইখলাস অর্থ গভীর অনুরক্তি, খাঁটি আনুগত্য, ভক্তিপূর্ণ উপাসনা, একনিষ্ঠতা, নিরেট বিশ্বাস। এ সুরার মূল বৈশিষ্ট্য হলো, মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের পরিচয় তাঁর প্রিয় হাবিবকে দিতে বলেছেন।
এ সুরার মর্মার্থের ভিত্তিতে নামকরণ করা হয়েছে সুরা ইখলাস। ইখলাস হল শিরক থেকে মুক্ত হয়ে তাওহিদ বা এক আল্লাহর ওপর খাঁটি ও নিরেট বিশ্বাসী হওয়াকে বলা হয়। যে ব্যক্তি এ সুরাটি পাঠ করবে ও এর মর্মার্থের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে নিশ্চিত শিরক থেকে মুক্তি লাভ করে নিরেট তাওহিদবাদী হয়ে যাবে এবং আল্লাহর মুখলিস বান্দায় পরিণত হবে।
আজকের পাঠ্যক্রম- সুরা ইখলাস পাঠের বৈশিষ্ট্য সমূহ
- সুরা ইখলাসের বিষয়বস্তু
- সুরা ইখলাসের শানে নুজুল
- সুরা ইখলাস পাঠের বৈশিষ্ট্য সমূহ
- কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমতুল্য
- সুরা ইখলাসকে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ বলার কারণ
- সুরা ইখলাসকে ভালোবাসলে আল্লাহও ভালোবাসেন
- গুনাহ মাফ
- দারিদ্র্য দূর
- জান্নাত লাভ
- সুরা ইখলাস তিনবার পাঠ করলে কি এক খতম কোরআন পাঠের সওয়াব পাওয়া যাবে
- শেষকথা
সুরা ইখলাসের বিষয়বস্তু
সুরা ইখলাসের চারটি আয়াতের মূল বিষয়বস্তু বা প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, তাওহিদ বা আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ।
- ১ম আয়াত- প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ একক ও অনন্য।
- ২য় আয়াত- দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি অমুখাপেক্ষী।
- ৩য় আয়াত- তৃতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, জন্মের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।
- ৪র্থ আয়াত- চতুর্থ আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি অতুলনীয়।
সুরা ইখলাসের শানে নুজুল
সুরা ইখলাসে বন্ধুর পরিচয় বন্ধু দেওয়ার মাধ্যমে বন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছে।
সুরা ইখলাস পাঠের বৈশিষ্ট্য সমূহ
এই সুরা এমন একটি সুরা যার মধ্যে মহয়ান আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের বিষয়টি সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যাহা অন্য কোনো সুরায় এমন সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়নি। মক্কার মুসরিক, কাফিরদের কাছে স্রষ্টা এক হওয়াটা আশ্চর্যের বিষয় ছিল এবং স্রষ্টা কিসের তৈরি ও কেমন জানার এটি জানার তাদের প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল। আর মহান আল্লাহ তাআলা জোরালো ভাষায় তাদের এইসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এ সুরায়। এ সুরার বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ-
কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমতুল্য
মহানবী (সা.) একদা সাহাবিদের বলেন, তোমারা কি এক রাতে কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশ পড়তে পারবে? সাহাবিরা এ প্রস্তাবকে খুবই কঠিন মনে করলেন। ফলে তারা বলল, আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করতে পারবে? মহানবী (সা.) তখন বললেন, সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ বুখারি, হাদিস- ৫০১৫, নাসায়ি, হাদিস- ৯৯৫)
আরও পড়ুনঃ সূরা কদরের বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে রাতে বারবার সুরা আল-ইখলাস পড়তে শুনেছেন। অতঃপর সকালে মহানবী (সা.)-কে এ বিষয়টি অবহিত করা হলো। মহানবী (সা.) তখন বলেন, ওই সত্তার শপথ, যার কুদরতের হাতে আমার জীবন, অবশ্যই এ সুরা কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ বুখারি- ৫০১৩, আবু দাউদ- ১৪৬১, নাসায়ি- ২/১৭১, মুআত্তা মালেক- ১/২০৮)
সুরা ইখলাসকে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ বলার কারণ
কোরআন মাজিদ তিন ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ আহকাম বা বিধি-বিধান সংক্রান্ত। আরেক ভাগ জান্নাতের সুসংবাদ ও জাহান্নামের দুঃসংবাদসংক্রান্ত এবং অন্য ভাগ আল্লাহর নাম ও গুণাবলিসংক্রান্ত। শেষোক্ত ভাগটি সুরা ইখলাসে একত্রিত হওয়ার কারণে একে কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশ বলা হয়েছে।
হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ কোরআনকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। আর এ সুরাটি (সুরা ইখলাস)-কে একটি ভাগে পরিণত করেছেন। (মুসলিম, হাদিস- ৮১২, তিরমিজি, হাদিস- ২৯০০)
সুরা ইখলাসকে ভালোবাসলে আল্লাহও ভালোবাসেন
মহানবী (সা.) একজন সাহাবির নেতৃত্বে একদল সৈনিককে যুদ্ধে প্রেরণ করেন। তিনি যুদ্ধের দীর্ঘ সময়ে শুধু সুরা ইখলাস দ্বারা নামাজ পড়িয়েছেন। সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে মহানবী (সা.)- কে তা অবহিত করেন। মহানবী (সা.) তাদের বলেন, তোমরা তাকে জিজ্ঞেস করো কেন সে এরূপ করেছে।
সেনাপতি বললেন, এ সুরায় আল্লাহর গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে বিধায় আমি এ সুরাকে ভালোবাসি। মহানবী (সা.) সাহাবিদের বলেন, তোমরা তাকে গিয়ে বলো, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন। (সহিহ বুখারি হাদিস নং ৭৩৭৫, মুসলিম হাদিস নং ৮১৩, নাসায়ি ২/১৭০)
গুনাহ মাফ
মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ২০০ বার সুরা ইখলাস পড়বে, তার ৫০ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, তবে ঋণ থাকলে তা মাফ হবে না। (তিরমিজি, হাদিস- ২৮৯৮)
দারিদ্র্য দূর
সাহল ইবন সাদ সায়েদি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)- এর কাছে দারিদ্র্যের অভিযোগ করল, মহানবী (সা.) তাকে বললেন, যখন তুমি ঘরে যাও তখন সালাম দেবে এবং একবার সুরা ইখলাস পড়বে। এ আমল করার ফলে কিছু দিনের মধ্যে তার দারিদ্র্য দূরীভূত হয়ে যায়। (কুরতুবি- ২০/১৮৫)
জান্নাত লাভ
একদা জনৈক সাহাবি মহানবী (সা.)- এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), আমি সুরা ইখলাসকে ভালোবাসি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বলেন, এ ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস- ৭৭৪, তিরমিজি, হাদিস- ২৯০১)
সুরা ইখলাস তিনবার পাঠ করলে কি এক খতম কোরআন পাঠের সওয়াব পাওয়া যাবে
এ সুরাটি তিনবার পাঠ করলেই পূর্ণ কোরআন মাজিদ পাঠ হয়ে যাবে বা এক খতম কোরআনের সওয়াবপ্রাপ্ত হবে, এরূপ কথা হাদিসের কোথাও বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে যে সুরা ইলখাস কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমতুল্য। এর মর্মার্থ হলো, এ সুরাটি যে ব্যক্তি বুঝে পাঠ করবে তার অন্তরে আল্লাহর নাম ও গুণাবলি গেঁথে যাবে, ফলে সে শিরকি চিন্তাধারা থেকে পরিচ্ছন্ন থাকবে।
অর্থাৎ সুরা ইখলাস পাঠের ফলে কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের আমল তার মধ্যে পাওয়া গেল। এর অর্থ এই নয় যে একবার সুরা পাঠ করলে এক-তৃতীয়াংশ পাঠ করা হলো এবং তিনবার পাঠ করলে এক খতম কোরআন পাঠ করা হলো এবং এক খতমের সওয়াবপ্রাপ্ত হবে।
আরও পড়ুনঃ আয়াতুল কুরসীর ফজিলত ও তাৎপর্য
শেষকথা
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের পবিত্র সূরা সুরা ইখলাস নিয়মিত তেলাওয়াত ও আমলের করার তৌফিক দান করুন। সূরা সুরা ইখলাস ফজিলতের উপর সকাল সন্ধ্যা আমল করার তৌফিক দান করুন। আশা করি লিখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে লিখাটি শেয়ার করবেন। আল্লাহপাক আমাদের ভালো রাখুন সুস্থ রাখুন এবং ইসলামের পথে চলার তৌফিক দেন করুন। আমিন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url