ধবংস প্রাপ্ত দয়াময়ী দেবী মন্দির পটুয়াখালী

আরো পড়ুনঃ ধ্বংস প্রাপ্ত ঐতিহাসিক লকমা জমিদার বাড়ি

সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার সংখ্যা প্রায় ২৫০০টির মতো। এই সকল প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার বেশীর ভাগের অবস্থা এখন প্রায় ধবংসের দ্বার প্রান্তে এসে দাড়িয়েছে। আবার কিছু রয়েছে যেগুলো এখন শুধুই ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে।

আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো সাগর কণ্যা খ্যাত পটুয়াখালি জেলার সুতাবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা "দয়াময়ী দেবীর মন্দির'' সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে সকল তথ্য। আশাকরি আপনারা আজকের আর্টিকেলটি পুরোটাই পড়বেন এবং যেনে নিবেন এই প্রাচীন মন্দির সম্পর্কে। চলুন দেখা যাক-

দয়াময়ী দেবী মন্দিরের অবস্থান

দয়াময়ী দেবীর মন্দিরটি সাগর কণ্যা খ্যাত পটুয়াখালি জেলার অন্তরগত গলাচিপা উপজেলা সদর থেকে উত্তর পূর্বদিকে ২১ কিলোমিটার দূরে ২০০ বছরের অধিক সময়ের প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক এই মন্দিরটি সুতাবাড়িয়া গ্রামে অবস্থিত।

দয়াময়ী দেবী মন্দিরের নাম করণ

২১৬ বছরের প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক এই মন্দিরটির নাম করণ করা হয়েছে মুলত সেখানে থাকা দয়াময়ী দেবীর নাম অনুসারে। ১২০৮ বঙ্গাব্দে জমিদার ভবানী শঙ্কর সেন এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন এবং এর নাম করণ করেন দয়াময়ী  দেবীর মন্দির। 

দয়াময়ী দেবী মন্দিরের ইতিহাস

লোকশ্রুতি অনুযায়ী একটি প্রাচীন বেল গাছের নীচে প্রায় ২১৬ বছর পূর্বে রাতের অন্ধ্যকারে ্মাটি ফুঁড়ে আবির্ভূত হয় দয়াময়ী দেবীর মূর্তি। একই রাতে স্বপ্নযোগে জমিদার ভবানী শঙ্কর সেনকে দয়াময়ী দেবী যেখানে আবির্ভূত হয়েছে সেখানে মন্দির প্রতিষ্ঠার আদেশ পান। আর আদেশ অনুসারে জমিদার সাহেব সেখানে দেবীর মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।

আরো পড়ুনঃ নান্দনিক হিন্দা কসবা শাহী জামে মসজিদ

আবার কিছু কিছু মানুষের মতানুজায়ী স্বপ্নের মাধ্যমে আদেশ পেয়ে জমিদার ভবানী শঙ্কর সেন তাঁর জমিদার বাড়ির পার্শ্বের নদীতে গোসল করতে যান এবং পাথরের তৈরী দেবি দয়াময়ীর মূর্তিটি নদীতে ভাসমান অবস্থায় খুজে পান। পরবর্তীতে জমিদার এটি উদ্ধার করেন এবং নির্মাণ করেন একটি মন্দির। আর এই মন্দিরের নাম করণ করা হয় দয়াময়ী দেবীর মন্দির।

দয়াময়ী দেবী মন্দিরে মেলা

এলাকায় বসবাসকারী একাধিক প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা বলেন যে, এক সময় ছিল যখন দয়াময়ী দেবী মন্দিরের প্রতি আকৃষ্ট দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমনকি অনেক দেশ থেকে মন্দিরে ছুটে আসতেন দলে দলে ভক্তবৃন্দ। সেই সময় মন্দির এলাকায় প্রতিবছর পুরো মাঘ মাস জুড়ে মেলা বসত। আর এই মেলা পরিচিত ছিল দয়াময়ী মেলে নামে।

হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটতো এই মেলায়। সাধু- সন্যাসীরা এই মেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ভীড় জমাতো। এখনো সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বইয়ে দয়াময়ী দেবীর মন্দির এবং মেলার বিবরণ রয়েছে। সময়ের আবর্তে ঐতিহ্যবাহী এই মেলা এখন অনুষ্ঠিত হয় কেবল মাঘী সপ্তমীতে মাত্র একদিন। মন্দিরের অনেক অংশ এখন তেতুলিয়া নদীতে বিলীন হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।

দয়াময়ী দেবী মন্দিরের নির্মাণশৈলী

দেবী দয়াময়ীর মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৩ (তিন) একর ভূমির উপর। প্রায় ৩০০ বর্গফুট ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট মন্দিরের মূল মেঝে। ছাদ দেওয়া অবস্থায় মন্দিরের সামনেই রয়েছে বেশ বড় একটি ভবন। আর এই ভবনটি ব্যবহার করা হতো বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবসহ সকল আচার অনুষ্ঠানের জন্য। একটি শিব মন্দির রয়েছে মূল মন্দিরের পশ্চিম প্রান্তে।

গম্বুজ আকৃতিতে নির্মাণ করা হয়েছিল শিব মন্দিরের উপরিভাগ। প্রধান মন্দির বা দয়াময়ী মন্দিরটির মূল ফটকের সামনে কাছেই রয়েছে দুইটি আলাদা কক্ষ, যা প্রহরীদের থাকার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। মূল মন্দিরের পূর্বদিকে একটু দূরে রয়েছে একটি বড় দীঘি।

দয়াময়ী মন্দিরের নামে ১৫ (পনেরো) একর জমি মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা জমিদার ভবানী শঙ্কর সেন রেকর্ড করে দিয়েছিলেন। বর্তমানে রেকর্ড করা জমিগুলোর বেশির ভাগ জমি সঠিক তদারকির অভাবে বেদখল হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান। এমনকী ঐতিহাসিক দয়াময়ী দেবীর মন্দির ভবনের মুল্যবান কাঠ থেকে শুরু করে পাথর, দরজা, জানালা এমনকি ইট পর্যন্ত লুটপাট হয়ে গেছে। 

দয়াময়ী দেবী মন্দিরের শেষকথা

সাগর কন্যা খ্যাত পটুয়াখালী জেলার ঐতিহাসিক দয়াময়ী দেবীর মন্দিরের মতো হাজার হাজার মন্দির, মসজিদ, জমিদার বাড়ি, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় অযত্ন এবং অবহেলেয় বিলীন হতে বসেছে। তাই আমাদের সকলের উচিৎ কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে এই সম্পদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা।

আরো পড়ুনঃ পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি জয়পুর হাট

আর্টিকেলটি যদি ভালো লাগে এবং উপকারি বলে মনে হয়, তাহলে এটি অন্যের সঙ্গে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো নতুন নতুন তথ্য জানার জন্য আমাদের পরবর্তী আর্টিকেলটি পড়ুন এবং আমাদের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
Md. Abir Hossain
Md. Abir Hossain
একজন ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট ও অর্ডিনারি আইটির সিনিয়র সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার। তিনি অনলাইন ইনকাম, ব্লগিং, SEO ও টেকনোলজি নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন। ৫ বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি শিক্ষার্থীদের অনলাইনে সফল হতে সহায়তা করে যাচ্ছেন।